এক নজরে জানুন,
ড. হোসনে আরা বেগম
জন্ম: ডিসেম্বর ১, ১৯৫৩ (বয়স ৬৬)
বগুড়া জেলা, বাংলাদেশ
জাতীয়তা: বাংলাদেশ
যেখানের শিক্ষার্থী: সরকারি শাহ্ সুলতান কলেজ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
পেশা: সমাজকর্মী
পরিচিতির কারণ: ঠেঙ্গামারা মহিলা সবুজ সংঘ-এর প্রধান নির্বাহী
দাম্পত্য সঙ্গী: অধ্যাপক আনসার আলী তালুকদার
পিতা-মাতা: সোলায়মান আলী (পিতা), জোবাইদা বেগম (মাতা)
পুরস্কার: বেগম রোকেয়া পদকহোসনে আরা বেগম (জন্মঃ ১৯৫৩)

বাংলাদেশের একজন সমাজকর্মী ও শিক্ষাবিদ যিনি ঠেঙ্গামারা মহিলা সবুজ সংঘ এর প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে সুপরিচিত। কাজের স্বীকৃতি হিসেবে অশোকা ফেলোশিপ, বেগম রোকেয়া পদকসহ নানা স্বীকৃতি ও সম্মাননা পেয়েছেন।

ব্যক্তিগত জীবন
ড. হোসনে আরা বেগম (পূর্ব নাম আ. সামাদ) এর বাবার বাড়ি বগুড়া জেলার মহাস্থানগড়ের পাশে ঠেঙ্গামারা গ্রামে। তিনি ১৯৫৩ সালের ডিসেম্বরে নানাবাড়ি বগুড়ার মহিষগোপাল গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ২৩ বছর বয়সের পুরুষজীবনে দুরারোগ্য রোগের মুখোমুখি হন। ঢাকার চিকিৎসকরা যখন জীবনের আশা ছেড়ে দিয়েছেন, তখন রাজশাহী মেডিকেলের চিকিৎসকরা তার শরীরের অভ্যন্তরে আবিষ্কার করলেন লিঙ্গ পরিবর্তনের আভাস। আব্দুস সামাদের শরীরের গোপনে বাসা বাঁধা টিউমার সারাতে গিয়ে চিকিৎসকেরা পেলেন নারীজীবনের আয়োজন। নিজের অনিচ্ছা সত্ত্বেও চিকিৎসক, শিক্ষক, বন্ধুস্বজনদের পীড়াপীড়িতে লিঙ্গ পরিবর্তন করেন। জটিল অস্ত্রোপচার শেষে ১৯৭৫ সালের ডিসেম্বরেই পুরুষ আব্দুস সামাদ রূপান্তরিত হন নারী হোসনে আরা বেগমে। একসময়ের পুরুষ বন্ধু অধ্যাপক আনসার আলী হাত বাড়িয়ে দেন নতুন জীবনে। বন্ধুকেই স্বামীরূপে গ্রহণ করে শুরু হয় হোসনে-আরার নতুন জীবন।

শিক্ষা জীবন
হোসনে আরা ছোটবেলা থেকে লেখাপড়ায় ভালো ছিলেন। বাঘোপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৩য় শ্রেণি পর্যন্ত পড়েন। তারপর গোকুল তছলিম উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ে চতুর্থ শ্রেণিতে ভর্তি হন। সেখান থেকেই তিনি ম্যাট্রিকুলেশন পাস করেন। পরে তৎকালিন সময়ের বেসরকারি বর্তমানে শাহ সুলতান কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট পাস করে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছিলেন পুরুষ হিসেবে। তার অধ্যয়নের বিষয় ছিল উদ্ভিদবিদ্যা। ১৯৭৫ সালে মাস্টার্স শেষবর্ষে তার জীবনের এই রূপান্তর ঘটে। যেটা নিয়ে সিরিজ প্রতিবেদন করেছিল সেই সময়ের সবচেয়ে জনপ্রিয় ম্যাগাজিন বিচিত্রা। এত কিছুর মধ্যেও হোসনে আরা বেগম মাস্টার্সে ভালো ফলাফল করেন।

শিক্ষকতা
অধ্যাপক হোসনে আরা বেগম বগুড়া সরকারি কলেজ, মহিবুর রহমান মহিলা কলেজ, কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজ ও জয়পুরহাট সরকারি মহিলা কলেজের অধ্যাপক ছিলেন।

অবদান
শিক্ষকতা দিয়ে কর্মজীবন শুরু হলেও সমাজকর্মী হোসনে-আরা ১৯৮০ সালে নিজ শহর বগুড়াতে, ১২৬ জন ভিক্ষুকের মুষ্টি চালের মাধ্যমে সংগ্রহীত ২০৬ মন চাল নিয়ে দেশের বড় এনজিওগুলোর অন্যতম প্রতিষ্ঠান ঠেঙ্গামারা মহিলা সবুজ সংঘ (টিএমএসএস)। বর্তমানে তিনি প্রতিষ্ঠানটির নির্বািহী পরিচালকের দাায়িত্ব পালন করছেন। ১৯৬৪ সালে ঠেঙ্গামারা মহিলা সবুজ সংঘ আত্মপ্রকাশ করলেও ১৯৮০ সালে হোসনে আরার নির্বাহী পরিচালনায় এটি বাংলাদেশের একটি অন্যতম বৃহৎ বেসরকারি উন্নয়ন সংগঠন হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। দরিদ্র জনগোষ্ঠীর একাধিক কল্যাণের স্বার্থেই সংগঠনটির জন্ম। ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন, ডিএফআইডি, নেদারল্যান্ডস গভর্নমেন্ট এবং আমেরিকাসহ আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থাগুলো এ সংগঠনটিকে অর্থায়ন করেন। এ সংগঠনটি টিএমএসএস মেডিকেল কলেজ, রানাতুঙ্গা হসপিটাল, ফাইভ স্টার মেমো জন হোটেল রিসোর্ট, দুটি সিএনজি স্টেশন, তিনটি পেট্রল পাম্প, বহুতল ভবন তৈরি করে ফ্ল্যাট বিক্রয়, রিয়েল এস্টেট ব্যবসা চালু করেছে। এর মাধ্যমে শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, মাইক্রো ফাইন্যান্সের মাধ্যমে ৫৩ লাখ পরিবার উপকৃত হয়েছে। এ সংগঠন থেকে সর্বোচ্চ ২০ লাখ টাকা ঋণ প্রদান করা হয়। বাংলাদেশের ৬৪টি জেলাতেই টিএমএসএসের শাখা রয়েছে। ৩১ হাজার অফিস কর্মচারী রয়েছেন। দেশের ছোট-বড় এক লাখ ১২ হাজার সমিতি টিএমএসএসের আওতাভুক্ত।

কৃষি কাজ
হোসনে আরা বেগম স্কুলজীবনে ৮ম শ্রেণিতে থাকাবস্থায় বয়েজ ক্লাব নামে একটি ক্লাব করেছিলাম। সেই ক্লাবের সদস্যদে নিয়ে নিজেদের জমি চাষাবাদ করে ফসল ফলাতেন। ফসল বণ্টনের ক্ষেত্রে সবাই মিলেই ভাগ করে নিতেন। তবে জমির মালিক হিসেবে হোসনে আরা বেগম একভাগ বেশি পেতেন। ঐক্যব্ধ হয়ে কাজ করার মানসিকতা তিনি এ ক্লাব থেকে পান। কোনো কোনো দিন হাল চাষ করার জন্য গরুর হাল না পেলে হোসনে আরা বেগমের নেতৃত্বে ক্লাব সদস্যরা সবার বাড়ি থেকে কোদাল মাঠে নেমে পড়তেন।

পুরস্কার ও সম্মাননা
সামাজিক কাজের স্বীকৃতি স্বরুপ হোসনে আরা বেগম অশোকা ফেলোশিপ ও বেগম রোকেয়া পদক পেয়েছেন।